ইসরাইলি জিম্মিরা আগামী শনিবারের মধ্যেই মুক্তি পেতে পারেন। গাজায় যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তাদের ‍মুক্তি দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে । একটি সূত্র জানিয়েছে, চুক্তি স্বাক্ষরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইসরাইলি সেনাবাহিনী ওই ভূখণ্ড থেকে আংশিক সেনা প্রত্যাহারের প্রথম পর্ব শেষ করবে। আজ বৃহস্পতিবার গাজা যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগের প্রথম ধাপের চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

হামাসের একটি সূত্র জানিয়েছে, ইসরাইলি সরকার চুক্তি অনুমোদনের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত জিম্মিদের হস্তান্তর করা হবে। হামাস কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন, গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃত জিম্মিদের মরদেহ উদ্ধার করতে আরও সময় লাগবে। তাঁদের সংখ্যা প্রায় ২৮ জন বলে মনে করা হচ্ছে। ট্রাম্প গতকাল ফক্স নিউজের ‘হ্যানিটি’ অনুষ্ঠানে বলেন, জিম্মিদের সম্ভবত আগামী সোমবার মুক্তি দেওয়া হবে।

ট্রাম্পের ঘোষণার পর ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিরা উল্লাস প্রকাশ করেছেন। এ ঘোষণার মাধ্যমে তাঁর পরিকল্পনার প্রথম ধাপে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির বিষয়ে চুক্তিতে পৌঁছানো গেছে। গাজার এ যুদ্ধে ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরাইলের নির্বিচার হামলা গাজার মধ্যপ্রাচ্যের চিত্র বদলে দিয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার জবাবে গাজায় ইসরাইলের নির্বিচার হামলা চালানোর দ্বিতীয় বার্ষিকীর ঠিক এক দিন পরই দুই পক্ষে এই চুক্তি হলো। মিসরে পরোক্ষ আলোচনায় ট্রাম্পের ২০ দফা কাঠামোর প্রাথমিক পর্যায়ে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে শান্তি ফিরিয়ে আনার বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো গেছে।

এই চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে দুই পক্ষকে আগের যেকোনো প্রচেষ্টার চেয়ে যুদ্ধ থামানোর কাছাকাছি নিয়ে আসবে। গাজায় ইসরাইলি হামলা অনেকটা আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ নিয়েছিল। ইরান, ইয়েমেন, লেবানন, এমনকি কাতারের মতো দেশে হামলা চালিয়েছিল ইসরাইল। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরের একজন বাসিন্দা আবদুল মাজিদ আবদ রাব্বো বলেন, যুদ্ধবিরতি, রক্তপাত ও হত্যাকাণ্ড বন্ধ হওয়ার জন্য মহান আল্লাহকে ধন্যবাদ। রাব্বো বলেন, শুধু আমি একা নই, পুরো গাজা উপত্যকা খুশি। সব আরব জনগণ, সারা বিশ্ব এ যুদ্ধবিরতি ও রক্তপাত বন্ধ হওয়ায় খুশি।

তবে গতকাল বুধবার গভীর রাতে ট্রাম্পের ঘোষিত এই চুক্তির বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি বা এ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। ফলে অনেক অমীমাংসিত প্রশ্ন রয়ে গেছে। ওই সব প্রশ্নের মীমাংসা না হলে আগের শান্তি প্রচেষ্টার মতো এবারও চুক্তিটি ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে।

ট্রাম্প নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ এক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমি অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করছি, ইসরাইল ও হামাস-উভয় পক্ষই আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে স্বাক্ষর করেছে।

ট্রাম্প আরও যোগ করেন, এর অর্থ হলো সব জিম্মিকে খুব শিগগির মুক্তি দেওয়া হবে। একটি শক্তিশালী, টেকসই ও চিরস্থায়ী শান্তির প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ইসরাইল তাদের সেনাদের নির্ধারিত সীমানায় ফিরিয়ে নেবে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, চুক্তি অনুমোদনের জন্য তিনি আজ মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকছেন।

নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেন, পরিকল্পনার প্রথম ধাপ অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সব জিম্মিকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। এটি একটি কূটনৈতিক সাফল্য এবং ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্য একটি জাতীয় ও নৈতিক বিজয়।

যুদ্ধ শেষ করার বিষয়ে চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে হামাস বলেছে, এই চুক্তির মধ্যে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার ও জিম্মি-বন্দী বিনিময় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। হামাস বলেছে, আমরা নিশ্চিত করছি, আমাদের জনগণের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না। আমরা আমাদের প্রতিজ্ঞার প্রতি বিশ্বস্ত থাকব। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আমরা জনগণের জাতীয় অধিকার কখনো ত্যাগ করব না। জিম্মিদের কয়েক দিনের মধ্যে মুক্তি পাওয়ার আশা।

হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে চুক্তি হচ্ছে, এমন ঘোষণার পর গাজায় আটক ইসরাইলিদের পরিবারগুলো তেল আবিবের ‘হোস্টেজ স্কয়ারে’ জড়ো হয়। জিম্মি মাতানের মা হাতান আনগ্রেস্ট বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আমরা তাঁকে ধন্যবাদ জানাই, তিনি ছাড়া আমাদের সন্তানেরা বাড়ি ফিরত না।